রিমান্ডে বেরিয়ে আসছে পরীমনির সব কুকর্ম : দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ‘প্লেজার ট্রিপ’

ডেস্ক রিপোর্ট •

বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ রাজধানীর বনানীর বাসা থেকে গ্রেফতার ঢাকাই সিনেমার আলোচিত ও রহস্যময়ী নায়িকা পরীমনি চার দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

জিজ্ঞাসাবাদে পরীমনির কাছ থেকে বেশকিছু ব্যাপক চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

পরীমনি চলচ্চিত্রের আড়ালে খারাপ ব্যবসা করতেন এবং এই ব্যবসাগুলোতে কারা তাকে পেট্রোনাইজ করেছেন, তাদের কথাও তিনি জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে ডিএমপির ডিবি কার্যালয়ের সামনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, বুধবার রাতে র‌্যাব অভিযান শেষে পরীমনিকে আটক করে। আটকের পর তাকে র‍্যাব সদরদপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতভর সেখানেই রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় পরীমনিকে। বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আবারও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

চলচ্চিত্র ও নিজ গ্লামারের আড়ালে খারাপ ব্যবসা করতেন চিত্রনায়িকা পরীমণি। আর দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ‘প্লেজার ট্রিপ’ (বিশেষ সঙ্গ) ও বিভিন্ন পার্টিতে অংশ নিয়ে অর্থ আয় করতেন। তার এই কাজে সহযোগিতা করতো কথিত প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ। রাজই প্রথমে পরীমণিকে কোটিপতি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বিশেষ উদ্দেশ্যে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন।

রাজের সঙ্গে মিশু হাসান ও জিসান মিলে ১০ থেকে ১২ জন তরুণী নিয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন। তাদের কাজই ছিল উচ্চবিত্ত ও বিভিন্ন ব্যবসায়ীকে ‘বিশেষ সঙ্গ’ দেওয়া। এর বিনিময়ে তারা অর্থ আয় করতেন। এই চক্রের তরুণীদের মধ্যে পরীমণির ‘চাহিদা’ ছিল সবচেয়ে বেশি। পরীমণি দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশেও ‘প্লেজার ট্রিপ’ দিতেন।

গ্রেফতার হওয়ার পর র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানিয়েছে পরীমণি নিজেই।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, পরীমণির বাসায় একটা মিনি বার রয়েছে। তিনি বাসায় মাঝে মধ্যেই পার্টির আয়োজন করতেন। এখানে বিভিন্ন ব্যক্তিরা আসতেন। তার এই কাজে সহযোগিতা করতেন নজরুল ইসলাম রাজ। এই সিন্ডিকেটের সদস্যদের বিষয়ে বিস্তারিত অনুসন্ধান চলতো।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পরীমণি ২০১৪ সালে শোবিজ মিডিয়ায় যুক্ত হন। গত সাত বছরে তিনি ৩০টির মতো সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এরমধ্যেই তিনি কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের চেয়ে নিয়মিত বিভিন্ন পার্টিতে অংশ নেওয়ার নেশা ছিল তার। এছাড়া চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশের পর থেকেই মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন তিনি। নিয়মিত বিভিন্ন পার্টিতে গিয়ে মদ পান করতেন। এসব পার্টিতে শিল্পপতিদের সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে সখ্য গড়ে তুলতেন। এরপর দেশের বাইরে বিশেষ করে দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে শিল্পপতিদের ‘এসকর্ট’ হিসেবেও কাজ করতেন।

জিজ্ঞাসাবাদে পরীমণি জানিয়েছে, তার ব্যবহৃত গাড়িটি একটি বেসরকারি ব্যাংকের উচ্চপদস্থ এক কর্মকর্তা কিনে দিয়েছিলেন। ওই কর্মকর্তার সঙ্গে তার বিশেষ সখ্য রয়েছে। করোনার মধ্যেই ওই ব্যক্তির সঙ্গে দুবাই ভ্রমণে যান তিনি। এছাড়া বিদেশে বসবাসকারী বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে পরীমণিকে যোগসূত্র ঘটিয়ে দেওয়ার কাজ করিয়ে দিতেন তুহিন সিদ্দিকী অমি।

র‌্যাবের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতারের পর পরীমণির মোবাইল ফোনটি তারা পরীক্ষা করে দেখেছেন। সেখানে অনেক ভিআইপি ব্যক্তি ও শিল্পপতিদের সঙ্গে তার যোগাযোগ ও বিশেষ সম্পর্ক থাকার অনেক তথ্য-প্রমাণ রয়েছে। অনেকের সঙ্গে তার নিয়মিত কথোপকথনের প্রমাণও পাওয়া গেছে। এসব ব্যক্তিরা সমাজের উঁচু স্তরের। তাদের বিষয়েও খোঁজ-খবর করা হচ্ছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

মাস খানেক আগে ঢাকা বোটক্লাবে গিয়ে ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ করে আলোচনায় আসেন নায়িকা পরীমণি। পরে পুলিশের তদন্তে উঠে আসে, বোটক্লাবে পরীমণি মদপান করে নিজেই উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করেছিলেন। এ ঘটনা ছাড়াও পরীমণির বিরুদ্ধে বিভিন্ন ক্লাবে গিয়ে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করার অনেক অভিযোগ আসে। শোবিজ সম্পর্কিত অনেকেই বলছেন, চলচ্চিত্রে ভালো অভিনয় করে আলোচনায় আসার চেয়ে ‘উল্টাপাল্টা নানান ঘটনা’ ঘটিয়ে আলোচনায় থাকতে চাইতেন এই নায়িকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পরীমণির সঙ্গে অনেক ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি ছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগের তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া অনেক রাজনীতিকের সঙ্গেও যোগাযোগ ছিল তার। আন্ডারওয়ার্ল্ডের অনেক সন্ত্রাসীকে অর্থের বিনিময়ে ‘বিশেষ সঙ্গ’ দিতেন তিনি। একটি সূত্র জানায়, প্রবীণ এক রাজনীতিকের বাসায় নিয়মিত যাতায়াত করতেন তিনি। কথিত প্রযোজক নজরুল রাজ তাকে ওই রাজনীতিকের বাসায় নিয়ে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন।

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল কে এম আজাদ বলেন, পরীমণি ও রাজের বিষয়ে আমরা অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছি। এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। যাচাই-বাছাই শেষে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’ এক প্রশ্নের জবাবে র‌্যাবের এই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, পরীমণি ও রাজের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলা দুটি তদন্ত করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করবে র‌্যাব।

পরীমনির ঘনিষ্ঠ এক নারী নজরদারিতে

গ্রেফতার চিত্রনায়িকা পরীমনির ঘনিষ্ঠ এক নারীকে নজরদারিতে রাখার কথা জানিয়েছে পুলিশ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (উত্তর) যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ।

তিনি কে, এই বিষয়টি এখনই প্রকাশ না করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, সেই নারী পরীমনির খুবই ঘনিষ্ঠ।

শুক্রবার দুপুরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ডিবি কর্মকর্তা। চার দিনের রিমান্ড আদেশ পাওয়ার পর বৃহস্পতিবার রাতে এই কার্যালয়েই পরীমনি নিয়ে আসা হয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য।

পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ওই নারী নিজেও সিনেমা পরিচালনার সঙ্গে জড়িত। তার সঙ্গে পরীমনির ঘনিষ্ঠতার তথ্যও এসেছে কিছুদিন আগেও। সেই নারীকে এই নায়িকা খুব আপনজনের একটি সম্বোধন করতেন।

এর আগে গত বুধবার সন্ধ্যায় বনানীর বাসায় অভিযান চালিয়ে পরীমনিকে আটক করা হয়। এসময় তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয় বলে জানায় র‌্যাব। পরদিন বৃহস্পতিবার এক প্রেস ব্রিফিংয়ে র‍্যাব জানায়, পরীমনির বাসায় একটা মিনি বার ছিল। তার বাসায় নিয়মিত পার্টি হতো। সেই পার্টিতে মদসহ সব ধরনের মাদক সাপ্লাই দিতো নজরুল ইসলাম রাজ।

প্রথমদিনের জিজ্ঞাসাবাদে কী পাওয়া গেছে- এমন প্রশ্নে হারুন অর রশিদ বলেন, ‘গতকাল তারা রিমান্ডে এসেছে। প্রাথমিকভাবে আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তাদের বাসা থেকে উদ্ধার মাদক বিষয়ে আমরা কথা বলেছি।

‘সে যে এই বিপথে এসেছে, অন্ধকার পথে পা বাড়িয়েছে, এটার পিছনে কারা কারা তাকে পেট্রোনাইজড করেছে,পৃষ্ঠপোষকতা করেছে। সে নামগুলো বলেছে।’

কাদের নাম বলেছেন পরীমনি?

গোয়েন্দা কর্মকর্তা কারও নাম না জানিয়ে বলেন, ‘এছাড়া একজন নারী নামও বলেছে।’

সেই নারী কে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ওই নারীর নাম আমরা এখনই বলছি না। তাকে নজরদারিতে রাখছি। শিগগিরই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করব।’

এর আগে জুন মাসে ঢাকা বোট ক্লাবে ধর্ষণ চেষ্টা ও হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ এনে মামলা করেন পরীমনি।মামলার আগে লাইভেও আসেন পরীমনি। তার বাসায় সাংবাদিক সম্মেলন করেন। তখন সেখানে উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী। পরী তাকে ‘মম মম’ বলছিলেন।

সময় এখন পরীমনির

ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিএক্টিভেট করেছেন চয়নিকা

দেশের ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’ পরীমনি গ্রেফতারের ঘটনাটি। এ চিত্রনায়িকার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রতি মুহূর্তের আপডেট জানাচ্ছে দেশের গণমাধ্যমগুলো। উঠে আসছে পেছনেরই ইতিহাসগুলো।

যে কারণে প্রসঙ্গ উঠেছে গত জুনে পরীমনির উত্তরা বোট ক্লাব কাণ্ডের বিষয়টি। ওই সময় ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’ছিল ঘটনাটি। যার মামলা এখনও চলছে। এখনো জনমনে রেশ কাটেনি সেই ঘটনা নিয়ে বের হওয়া চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।

সেই ঘটনার রেশেই প্রশ্ন উঠেছে, পরীমনির কথিত মা চলচিত্র ও নাট্টনির্মাতা চয়নিকা চৌধুরী কোথায়? বুধবারে লাইভে এসে পরীমনির আকুতি জানানোর পর থেকে তার বাসায় র‌্যাবের অভিযান, আটক, গ্রেফতার, আদালতে হাজির ও রিমান্ডের ঘটনায় কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি চয়নিকাকে।

অথচ বোট ক্লাবের ঘটনায় সংবাদসম্মেলনে কাঁদতে থাকা পরীমনির চোখের জল মুছে দিয়েছিলেন চয়নিকা। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি নিজেও ঘটনার বিষয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। এক কথা সার্বক্ষণিক পরীমনির ছায়া হয়ে থেকেছিলেন। সাহস জুগিয়েছিলেন পরীমনির।

বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক। এবারের ঘটনায় পরীমনি নিজেই সাহায্য চাইছিলেন লাইভে এসে। তবুও চয়নিকাকে তার ধারে-কাছেও দেখা যায়নি। আদালতেও যাননি। এমনকি এ নিয়ে গত দুই দিনে নিজের ফেসবুক ওয়ালে কোনো স্ট্যাটাসও দেননি।

নিজের এই অনুপস্থিতির বিষয়ে এক গণমাধ্যমকে চয়নিকা জানিয়েছেন, ওই ঘটনায় তিনি পরীমনির কাছে ছুটে গিয়েছিলেন দায়িত্ববোধ থেকে। সবার বিপদেই তিনি এভাবে এগিয়ে আসেন। কিন্তু এবার পারেননি কারণ, পরী যখন লাইভে আসেন তখন তিনি ফেসবুকেই ছিলেন না। সন্ধ্যা ৬টার পর তিনি জেনেছিলেন কিন্তু ততক্ষণে বিষয়টি র‌্যাবের অভিযান চলছে।

তাই বলে ফেসবুকেও কি একটা স্ট্যাটাস দেওয়া গেল না? চয়নিকাকে এ প্রশ্ন না করা হলেও পরে দেখা গেছে, তার ফেসবুক আইডিটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বৃহস্পতিবার রাত থেকেই।

চয়নিকা চৌধুরীর ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

জানা গেছে, তিনি নিজের অ্যাকাউন্ট ডিএক্টিভেট করেছেন। পরী ইস্যুতে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাকে নিয়ে নানারকম নেতিবাচক মন্তব্য দেখা যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব সাইবার আক্রমণ থেকে দূরে থাকতেই ফেসবুক অ্যাকাউন্ট ডিএক্টিভ করেছেন চয়নিকা।

চলচ্চিত্রের আড়ালে খারাপ ব্যবসা করতেন পরীমনি: ডিসি হারুন

বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যসহ রাজধানীর বনানীর বাসা থেকে গ্রেফতার ঢাকাই সিনেমার আলোচিত ও রহস্যময়ী নায়িকা পরীমনি চার দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।

জিজ্ঞাসাবাদে পরীমনির কাছ থেকে বেশকিছু ব্যাপক চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।পরীমনি চলচ্চিত্রের আড়ালে খারাপ ব্যবসা করতেন এবং এই ব্যবসাগুলোতে কারা তাকে পেট্রোনাইজ করেছেন, তাদের কথাও তিনি জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন বলে শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে ডিএমপির ডিবি কার্যালয়ের সামনে ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।

এ ছাড়া গ্রেফতার অপর আসামি চলচ্চিত্র প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ অন্ধকার পথে কিছু তথাকথিত মডেলদের নিয়ে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন মানুষকে মনোরঞ্জন করাতেন বলেও জানান যুগ্ম কমিশনার হারুন।

পরীমনির বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগের তদন্ত করা হচ্ছে- এমন প্রশ্নের উত্তরে হারুন বলেন, পরীমনি একজন চিত্রনায়িকা। তিনি এর আড়ালে যে খারাপ ব্যবসাগুলো করতেন এবং এই ব্যবসাগুলোতে কারা তাকে পেট্রোনাইজ করেছেন, এ কথাগুলো তিনিও স্বীকার করেছেন। আমরাও নজরদারি করছি। জিমিকেও হয়তো আমরা শিগগিরই গ্রেফতার করব।

প্রসঙ্গত, বুধবার রাতে র‌্যাব অভিযান শেষে পরীমনিকে আটক করে। আটকের পর তাকে র‍্যাব সদরদপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতভর সেখানেই রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় পরীমনিকে। বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে আবারও তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার বিকাল ৪টার দিকে পরীমনির বাসায় অভিযানে যায় র‌্যাব-১ এর সদস্যরা। এ সময় তাৎক্ষণিক ফেসবুক লাইভে এসে পরীমনি বিষয়টি সবাইকে জানান। তিনি বলেন, অজ্ঞাত বিভিন্ন পোশাকের কয়েকজন ব্যক্তি বাসার বাইরে থেকে কলিং বেল দিয়ে দরজা খুলতে বলছে। আমি ভয় পাচ্ছি।

তিনি থানা-পুলিশ, ডিবির কর্মকর্তা ও তার পরিচিতদের কাছে ফোন করে তাকে বাঁচানোর আহ্বান জানান। বাইরে থেকে বারবার র‍্যাব তাদের পরিচয় দিলেও ভেতর থেকে দরজা খুলছিলেন না তিনি। পরে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বাসার বারান্দা দিয়ে দেখে বিকাল ৪টা ৩৫ মিনিটে ভেতর থেকে দরজা খুলে দেওয়া হয়। এরপর র‍্যাব সদস্যরা ভেতরে ঢোকেন ও তল্লাশি শুরু করেন। পরে রাত ৮টার দিকে নতুন মাদক এলএসডি, আইস ও বিদেশি মদসহ পরীমনিকে আটক করে র‌্যাব সদরদপ্তরে নেওয়া হয়।

পরদিন বৃহস্পতিবার বিকালে বনানী থানায় পরীমনিকে হস্তান্তর করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করে র‌্যাব।পরে রাত ৮টা ২৫ মিনিটে তাকে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মামুনুর রশীদের আদালতে নেওয়া হয়। বনানী থানার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলায় পরীমনিকে সাত দিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বনানী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শেখ সোহেল রানা।এর বিরোধিতা করেন নিলাঞ্জনা রেফাত সুরভীসহ কয়েকজন আইনজীবী। আদালত তা নাকচ করে দেন। পরে পরীমনির চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

জিজ্ঞাসাবাদের সময় পুলিশকে ‘ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলের’ চেষ্টা পরীমনির!

অবৈধ মাদকদ্রব্য রাখা, পর্নোগ্রাফি ও ব্ল্যাকমেইলের অভিযোগে গ্রেফতার ঢাকাই সিনেমার আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনিকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় পুলিশ কর্মকর্তাদের ‘ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইলের’ চেষ্টা করেন বলে জানা গেছে।

জিজ্ঞাসাবাদে তার বর্তমান পরিস্থিতির জন্য নিজের ‘অপরিপক্বতাকে’ দায়ী করেন। সেই সঙ্গে শৈশবে মা-বাবাকে হারানোর কথা উল্লেখ করে আবেগি বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করেন নায়িকা।

বৃহস্পতিবার বিকালে পরীমনিকে বনানী থানায় হস্তান্তর করে র‌্যাব। এরপর মাদক মামলায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ।

সূত্রে জানা গেছে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় পরীমনি স্বাভাবিকই ছিলেন। তিনি অকপটে স্বীকার করেন, বর্তমান পরিণতির জন্য তার অপরিক্বতা দায়ী। তাকে যারা পরিচালনা করতেন, তারা কোনো বিষয়ে সতর্ক করেননি। নিজের সীমানাও অনেক সময় ভুলে গেছেন তিনি।

যাচাই-বাছাই ছাড়া যার তার সঙ্গে সম্পর্ক রাখাও বুদ্ধিদীপ্ত সিদ্ধান্ত ছিল না বলে মনে করছেন তিনি। তাই চিত্রনায়িকা পদস্খলনের জন্য দায়ী করেছেন তার পারিপার্শ্বিকতাকে।

জিজ্ঞাসাবাদে পরীমনি অভিভাবক শূন্যতার কথা উল্লেখ করে আবেগি হয়ে পড়েন।

উল্লেখ্য, বুধবার রাতে বনানীর বাসায় পৃথক অভিযান চালিয়ে পরীমনি ও রাজকে আটক করে র‍্যাব। অভিযানকালে তাদের বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়।

পরীমনি কাণ্ডে নির্মাতা চয়নিকা চৌধুুরীকে রাজধানীর পন্থপথ থেকে আটক করা হয়েছে।

শুক্রবার সন্ধ্যায় তাকে আটক করে গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা।এই নাট্টনির্মাতাকে নিজের ‘মম’ বলে সম্বোধন করেন চিত্রনায়িকা পরীমণি। বিভিন্ন সময় তাদের দুজনকে একসঙ্গে দেখা যায়।

পরীমনির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সবসময় পাশে ছিলেন এই নির্মাতা। বিশেষ করে গত মাসে ঢাকার সাভারে উত্তরা বোটক্লাব কাণ্ডে সর্বদা পাশে থেকে পরীমণিকে সাহস জুগিয়েছিলেন চয়নিকা।

ঢাকা বোর্ড ক্লাবের ঘটনায় পরীমনি চয়নিকাকে কাছে পেলেও পরীমনির বাসায় যখন র‌্যাব অভিযান চালায় তখন চয়নিকাকে দেখা যায়নি। পরীমনি আটকের খবরটি গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ার প্রকাশ হলেও তখনও নাট্যনির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীও উধাও ছিলেন। এবার বিপদে মেয়ের কাঁধে হাত রেখে সান্ত্বনা দিতে দেখা যায়নি তাকে।